আসিফ শুভ্র
রায়হানের চোখ ছলছল.....। হা করে লাবণ্যের দিকে তাকিয়ে আছে।
লাবণ্য আজ বেশ সুন্দর করে সেজেছে।
রায়হান মানসিক ভাবে বেশ শক্ত। কান্না পাচ্ছে, তাও চোখে বা চেহারাতে কষ্টের রেশমাত্র নেই।
লাবণ্যকে রায়হান আজও আগের মতই ভালবাসে।
রায়হান জানে....লাবণ্য সুজনের সাথেই দেখা করতে যাচ্ছে।
সুজনের সাথে লাবণ্যের দেখা হয়,কথা হয়......
দুজনে বেশ অন্তরঙ্গ সময় কাটায়,সবই রায়হান বোঝে।
শুধু শুধু মিথ্যার আশ্রয় নেয় কেন লাবণ্য!!!!
কেন বলে কাজিনের সাথে দেখা করবো,একটু বাইরে যাবো....কি দরকার!!!
লাবণ্যের ফোন বাজছে....
সুজনই ফোন করছে। লাবণ্যের উচ্ছ্বলতা দেখে এটা সহজেই বোঝা যায় ।
রায়হান আগে পাগলামি করতো,চিল্লাচিল্লি করতো....ইদানিং কিছুই করেনা।
আর কতো!!!
আর তো কয়েকটা দিনই বাকী.....
নিজের স্বপ্নগুলো ফিকে হয়ে গেছে,তাই বলে তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটা স্বপ্ন দেখবে না!!!
দেখুক না ! তবে রায়হানের কষ্টটা....কেন লাবণ্য এমন লুকোচুুরি করে!?
আমি বসে লাবণ্য আর রায়হানের দিকে তাকিয়ে আছি।
আহ্হারে জীবন!!!!
একটা শিক্ষিত,এত্তো সুন্দর ছেলে! আজ ২টা কিডনীই বিকল হয়ে ডায়ালাইসিস ইউনিটে ৩ বৎসর যাবৎ ডায়ালাইসিস নিচ্ছে।
রায়হানের সাথে আমার বেশ ভাল খাতির।
শুভ্রদা.......বলে যখন ডাকে.....অনেক মায়া লাগে। রায়হান বুয়েট থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
এ পাস করেছিল। বছর তিনেক আগের কথা।
গরীব ঘরের সন্তান তো! টিউশনি করাতে করাতে নিজের শরীরটাই যে বিকল হয়ে যাচ্ছে খেয়াল করার সময়ই পায়নি। বাবা নেই,২টা বোনকে
নিজেরই ভাল পাত্র দেখে বিয়ে দিতে হয়েছে।
বোনরা আজ যে যার সংসার নিয়েই মহাব্যস্ত। বৃদ্ধা মা আর লাবণ্যকে নিয়েই ভালোই তো চলছিল......
পাশ করেই একটা পেট্রোলিয়াম অয়েল কোম্পানীতে চাকরীও জুটেছিল। বেতন ৪৫ হাজার.....
আর আজ!!! ৩ বৎসর ধরে ২টা কিডনীই বিকল।
টুকটাক কাজকর্ম ও করার মত শক্তি নেই। একেবারেই বিছানাতে পড়া।
রায়হান আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
মায়া লাগছে ওকে।
লাবণ্য এগিয়ে এসে বললো--
"
শুভ্রদা! আমার একটু বাইরে যেতে হবে । ডায়ালাইসিসেরর তো প্রায় ৪ ঘন্টা লাগবে। রায়হানের দিকে একটু খেয়াল রাইখেন!
ওর দুপুরের খাবারটা বাটিতে আছে। ওকে বলবেন খেয়ে নিতে!"
আমি কিছুই বললাম না। চিকিৎসক হিসাবে মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে গবেষনা করাটা আমার কাজ না।
লাবণ্য হেঁটে চলে গেল।
রায়হান চোখ মুছছে। আমি উঠে ওর কাছে গেলাম। আস্তে করে আমার হাত টা চেপে ধরলো......
"
শুভ্রদা!কেমন আছেন?"
--" ভাল। রায়হান !!
আপনি কেমন আছেন?"
রায়হান একপাশে ফিরে দ্রুত চোখ মুছে নিল।
"হা! হা! হা!!
ভাল আছি শুভ্রদা। মানুষের করুণায় বেশ ভালো।
লাবণ্যের করুণা,আপনাদের,.....সৃষ্টিকর্তার,এই শরীরের!
আচ্ছা! শুভ্রদা? মরবো কবে?? কাহিল লাগে ভাইয়া! আর তো টানতে পারিনা।"
কি অদ্ভুত প্রশ্ন!!!
মানুষ বাঁচতে চায়,রায়হান মরতে চায়!
"
শুভ্রদা!টাকা পয়সা শেষ। বুয়েটে পড়াকালিন সময়ে টিউশনি করে লাখ দশেক টাকা জমিয়ে ছিলাম। দুই
বোনের বিয়ে.....নিজের বিয়ে.....নিজের অসুস্থতা.......গতকাল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে খবর নিয়ে জানলাম.....বাকি আছে হাজার দশেক......।
ছোট বোনটা ঐদিন বাসায় বেড়াতে আসলো.......এমনিতেই টানাটানির সংসার আমার ! কি দরকার ছিল বলেন তো বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে বেড়াইতে আসার? !"
রায়হানের শ্বাসকষ্ট বাড়ছে। ওর ফুসফুসের অবস্থা খুব খারাপ।
এর আগে ৩দিন আই সি ইউ তে ছিল।
মরার উপর খাড়ার ঘা।
---"
শুভ্রদা!......... কোনদিন এত কঠিন বাস্তবতার মুখমুখি হব! বুঝিনি।
জীবনের ছেলে বেলা থেকেই তো রেলগাড়ির মতই ছুটছি.....বাবার মৃত্যু,নিজের পড়াশুনা....সংসারের দায়িত্ব.....বোনদের বিয়ে!"
রায়হানের শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেছে।
কথা বলতে পারছে না। কথা জড়িয়ে আসছে......."
শুভ্রদা!!!!!
লাবণ্য একটা ছেলেকে ভালবাসে। সুজন নাম!
ছেলেটার নাম্বার সুজিতা নামে সেইভ করা ওর মোবাইলে......প্রায়ই ফোন দেয়!
আমাকে কিছুই বলে না। একদিন ও বাথরুমে......ওর
ফোনটা আমার পাশেই ছিল। আমি ফোনটা ধরা মাত্রই অপর পাশ থেকে
পুরুষ কন্ঠে বললো...
"
মরা রোগীর খেদমত আর কতো করবা! আমি যে দাঁড়িয়ে আছি!
১ঘন্টা ধরে.....খেয়াল আছে?"
শুভ্রদা!!!!
আমি আস্তে লাইনটা কেটে দিছি।"
রায়হান কাঁদতেছে.......
আমি খুব বিব্রত বোধ করতেছি। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ছেলেটার।
সিস্টার কে নেবুলাইজ করতে বললাম। নেবুলাইজ করলে শ্বাসকষ্টের রোগীরা একটু আরাম পায়।
আমি উঠতে গেলাম। রায়হান হাত চেপে ধরলো........
বুঝলাম,রায়হান আরও কথা বলতে চায়। না বলা কষ্ট গুলা আমাকে বলে একটু হালকা হতে চাচ্ছে.....
নেবুলাইজেশন চললো প্রায় ৩মিনিট।
রায়হান আস্তে আস্তে আবার শুরু করলো---
"
লাবণ্যের সাথে বুয়েটে ৩য় বর্ষে পরিচয়। আমার ছাত্রী ছিল।
অঙ্কে খুব কাঁচা। ওকে ইন্টারের ম্যাথ,ফিজিক্স পড়াতাম। যখন বুঝলাম ও আমাকে ভালবাসে.....
টিউশনিতে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম।
হা! হা!!!
একদিন সকালে বুয়েটের তিতুমীর হলে এসে হাজির। সে কি কান্না!!!
প্রেম জিনিসটা কি ঐদিন ই বুঝলাম। এরপরই দুইজনের পথচলা শুরু।
একদিন রিক্সায় লাবণ্যকে জিগ্গেশ করেছিলাম....
"
লাবণ্য!!! তুমি আজীবন এমন ই থাকবা তো? আমি যদি মারা যাই.....
লাবণ্যতো সেদিন রাগ করে কেঁদেছিল।
সবকিছুই বদলে যায়....তাইনা শুভ্রদা!!!!
নাহ! লাবণ্যের দোষ দেই না।
দোষ আমার কপালের। আর কত!!
ও ওতো একটা নারী। তাইনা! ওর ও তো শখ আহ্লাদ আছে।
কি পূরণ করতে পারছি ওর??
কিছুই না।
২টা বছর ধরে না পারি শারিরীক সুখ দিতে!
না পারি ওর টুকটাক আবদার গুলাও পূরণ করতে। গত ঈদে একটা কাপড় ও দিতে পারি নাই ।"
রায়হানের চোখে পানি।
"
শুভ্রদা!!! কাকে বলবো দুখের কথা!
আপনি আবার বিরক্ত হচ্ছেন না তো?"
আমি বিরক্ত হচ্ছিনা ।
কিন্তু আমার কষ্ট হচ্ছে। রায়হানের জন্য। ভাগ্যের পরিহাস এত নিষ্ঠুর হয়!!!
---"
শুভ্রদা। আমার চাওয়া পাওয়া কি এখন জানেন?
আমি চাই আমার মৃত্যু পর্যন্ত লাবণ্য শুধু আমার পাশে থাকুক।
আমার মৃত্যুর পর যেন বিয়েটা করে।
আমার মৃত্যুর আগে এটা হলে প্রচন্ড কষ্ট পাব। ও সুখী হোক। আমার ভালবাসাকে ওর জন্য বিসর্জন করলাম। "
আমার চোখে পানি এসে গেছে।
আসলেই কি লাবণ্যের দোষ দেয়াটা ঠিক হবে!!!
৩ বৎসর যাবৎ একটা কিডনী রোগীর সাথে সংসার করছে,এই ধরণের রোগীদের লাইফের কি গ্যারান্টি! আজ আছে তো কাল নাই।
--"
শুভ্রদা! সুজন ছেলেটা ওর কলেজ ফ্রেন্ড। মাঝে মধ্যে আমাকে দেখতে আসে;ওর গলার টোন টা আমার মুখস্থ।
কষ্ট পেলাম সেইদিন ই যেদিন লাবণ্যের ব্যাগে কনডম পেলাম!"
রায়হান কাঁদছে.....বাচ্চাদের মত।
---"
বাদ দাও রায়হান! খেয়ে নাও।
খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
--" খাবোনা ভাই। টেনশন লাগতেছে।
লাবণ্য ইদানিং বাইরে গেলে ফোন ধরেনা। আমার ভালবাসার আমানতকে কলঙ্কিত করে.......আমি টের পাই ভাই।
ওর শরীর থেকে ইদানিং অপরিচিত বিশ্রী ঘ্রাণ আসে!"
আমি উঠে দাঁড়ালাম। রায়হানের শ্বাসকষ্ট প্রচন্ড....।
ছেলেটার অবস্থা ভীষন নাজুক।
কয়দিন বাঁচে কে জানে!!!
৩ ঘন্টা হয়ে গেল লাবণ্য একটা ফোন ও দিলোনা।
-----------
১৩.০৯.২০১৪
রাত ৩টা। এই মাত্র রায়হান মারা গেল। ডায়ালাইসিস শেষে বাসায় গেছিল ১০ তারিখ। ১২তারিখে প্রচন্ড শ্বাস কষ্ট উঠে।
আই সি ইউ তে লাইফ সাপোর্টে ছিল।
যা!!!! মুক্তি......শালার জীবন! এতো কষ্ট ক্যান এই ছোট্ট জীবনে?
চিরমুক্তি.............কষ্টের জীবন থেকে।
রায়হানের জন্য মায়া লাগছে।
তবে শান্তি লাগছে.....করুণার জীবন থেকে ছুটি পেয়েছে রায়হান, এই জন্য।
লাবণ্য দাঁড়িয়ে আছে। একদম কোণায়। ওর চোখেও পানি...............হয়তো অনেক ভালবাসতো রায়হান কে।
একটা প্রেম,একটা গল্পের করুণ পরিণতি হলো !!!!!
------------
গত কয়েক দিন যাবৎ একটা প্রশ্নই মাথায় ঘুরে আমার......
এই যে, আমরা হুদাই উ হ! আহ!!! করি...
এত কষ্টের নিস্বাস ফেলি......কিসের কষ্ট আমার/আমাদের? কেন শুকরিয়া করিনা সৃষ্টিকর্তার কাছে!!
কেন নাটক করি কষ্টে থাকার???
কেন??????
মানুষের গল্প শুনলে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয়।
আর যখন হুদাই কষ্টের নাটক করি,জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলি তখন নিজেকে একটা পুরা ফাউল মনে হয় ।
নেংটি পড়া ফাউল.........
=============================================================
সুজনই ফোন করছে। লাবণ্যের উচ্ছ্বলতা দেখে এটা সহজেই বোঝা যায় ।
রায়হান আগে পাগলামি করতো,চিল্লাচিল্লি করতো....ইদানিং কিছুই করেনা।
আর কতো!!!
আর তো কয়েকটা দিনই বাকী.....
নিজের স্বপ্নগুলো ফিকে হয়ে গেছে,তাই বলে তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটা স্বপ্ন দেখবে না!!!
দেখুক না ! তবে রায়হানের কষ্টটা....কেন লাবণ্য এমন লুকোচুুরি করে!?
আমি বসে লাবণ্য আর রায়হানের দিকে তাকিয়ে আছি।
আহ্হারে জীবন!!!!
একটা শিক্ষিত,এত্তো সুন্দর ছেলে! আজ ২টা কিডনীই বিকল হয়ে ডায়ালাইসিস ইউনিটে ৩ বৎসর যাবৎ ডায়ালাইসিস নিচ্ছে।
রায়হানের সাথে আমার বেশ ভাল খাতির।
শুভ্রদা.......বলে যখন ডাকে.....অনেক মায়া লাগে। রায়হান বুয়েট থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
এ পাস করেছিল। বছর তিনেক আগের কথা।
গরীব ঘরের সন্তান তো! টিউশনি করাতে করাতে নিজের শরীরটাই যে বিকল হয়ে যাচ্ছে খেয়াল করার সময়ই পায়নি। বাবা নেই,২টা বোনকে
নিজেরই ভাল পাত্র দেখে বিয়ে দিতে হয়েছে।
বোনরা আজ যে যার সংসার নিয়েই মহাব্যস্ত। বৃদ্ধা মা আর লাবণ্যকে নিয়েই ভালোই তো চলছিল......
পাশ করেই একটা পেট্রোলিয়াম অয়েল কোম্পানীতে চাকরীও জুটেছিল। বেতন ৪৫ হাজার.....
আর আজ!!! ৩ বৎসর ধরে ২টা কিডনীই বিকল।
টুকটাক কাজকর্ম ও করার মত শক্তি নেই। একেবারেই বিছানাতে পড়া।
রায়হান আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
মায়া লাগছে ওকে।
লাবণ্য এগিয়ে এসে বললো--
"
শুভ্রদা! আমার একটু বাইরে যেতে হবে । ডায়ালাইসিসেরর তো প্রায় ৪ ঘন্টা লাগবে। রায়হানের দিকে একটু খেয়াল রাইখেন!
ওর দুপুরের খাবারটা বাটিতে আছে। ওকে বলবেন খেয়ে নিতে!"
আমি কিছুই বললাম না। চিকিৎসক হিসাবে মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে গবেষনা করাটা আমার কাজ না।
লাবণ্য হেঁটে চলে গেল।
রায়হান চোখ মুছছে। আমি উঠে ওর কাছে গেলাম। আস্তে করে আমার হাত টা চেপে ধরলো......
"
শুভ্রদা!কেমন আছেন?"
--" ভাল। রায়হান !!
আপনি কেমন আছেন?"
রায়হান একপাশে ফিরে দ্রুত চোখ মুছে নিল।
"হা! হা! হা!!
ভাল আছি শুভ্রদা। মানুষের করুণায় বেশ ভালো।
লাবণ্যের করুণা,আপনাদের,.....সৃষ্টিকর্তার,এই শরীরের!
আচ্ছা! শুভ্রদা? মরবো কবে?? কাহিল লাগে ভাইয়া! আর তো টানতে পারিনা।"
কি অদ্ভুত প্রশ্ন!!!
মানুষ বাঁচতে চায়,রায়হান মরতে চায়!
"
শুভ্রদা!টাকা পয়সা শেষ। বুয়েটে পড়াকালিন সময়ে টিউশনি করে লাখ দশেক টাকা জমিয়ে ছিলাম। দুই
বোনের বিয়ে.....নিজের বিয়ে.....নিজের অসুস্থতা.......গতকাল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে খবর নিয়ে জানলাম.....বাকি আছে হাজার দশেক......।
ছোট বোনটা ঐদিন বাসায় বেড়াতে আসলো.......এমনিতেই টানাটানির সংসার আমার ! কি দরকার ছিল বলেন তো বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে বেড়াইতে আসার? !"
রায়হানের শ্বাসকষ্ট বাড়ছে। ওর ফুসফুসের অবস্থা খুব খারাপ।
এর আগে ৩দিন আই সি ইউ তে ছিল।
মরার উপর খাড়ার ঘা।
---"
শুভ্রদা!......... কোনদিন এত কঠিন বাস্তবতার মুখমুখি হব! বুঝিনি।
জীবনের ছেলে বেলা থেকেই তো রেলগাড়ির মতই ছুটছি.....বাবার মৃত্যু,নিজের পড়াশুনা....সংসারের দায়িত্ব.....বোনদের বিয়ে!"
রায়হানের শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেছে।
কথা বলতে পারছে না। কথা জড়িয়ে আসছে......."
শুভ্রদা!!!!!
লাবণ্য একটা ছেলেকে ভালবাসে। সুজন নাম!
ছেলেটার নাম্বার সুজিতা নামে সেইভ করা ওর মোবাইলে......প্রায়ই ফোন দেয়!
আমাকে কিছুই বলে না। একদিন ও বাথরুমে......ওর
ফোনটা আমার পাশেই ছিল। আমি ফোনটা ধরা মাত্রই অপর পাশ থেকে
পুরুষ কন্ঠে বললো...
"
মরা রোগীর খেদমত আর কতো করবা! আমি যে দাঁড়িয়ে আছি!
১ঘন্টা ধরে.....খেয়াল আছে?"
শুভ্রদা!!!!
আমি আস্তে লাইনটা কেটে দিছি।"
রায়হান কাঁদতেছে.......
আমি খুব বিব্রত বোধ করতেছি। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ছেলেটার।
সিস্টার কে নেবুলাইজ করতে বললাম। নেবুলাইজ করলে শ্বাসকষ্টের রোগীরা একটু আরাম পায়।
আমি উঠতে গেলাম। রায়হান হাত চেপে ধরলো........
বুঝলাম,রায়হান আরও কথা বলতে চায়। না বলা কষ্ট গুলা আমাকে বলে একটু হালকা হতে চাচ্ছে.....
নেবুলাইজেশন চললো প্রায় ৩মিনিট।
রায়হান আস্তে আস্তে আবার শুরু করলো---
"
লাবণ্যের সাথে বুয়েটে ৩য় বর্ষে পরিচয়। আমার ছাত্রী ছিল।
অঙ্কে খুব কাঁচা। ওকে ইন্টারের ম্যাথ,ফিজিক্স পড়াতাম। যখন বুঝলাম ও আমাকে ভালবাসে.....
টিউশনিতে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম।
হা! হা!!!
একদিন সকালে বুয়েটের তিতুমীর হলে এসে হাজির। সে কি কান্না!!!
প্রেম জিনিসটা কি ঐদিন ই বুঝলাম। এরপরই দুইজনের পথচলা শুরু।
একদিন রিক্সায় লাবণ্যকে জিগ্গেশ করেছিলাম....
"
লাবণ্য!!! তুমি আজীবন এমন ই থাকবা তো? আমি যদি মারা যাই.....
লাবণ্যতো সেদিন রাগ করে কেঁদেছিল।
সবকিছুই বদলে যায়....তাইনা শুভ্রদা!!!!
নাহ! লাবণ্যের দোষ দেই না।
দোষ আমার কপালের। আর কত!!
ও ওতো একটা নারী। তাইনা! ওর ও তো শখ আহ্লাদ আছে।
কি পূরণ করতে পারছি ওর??
কিছুই না।
২টা বছর ধরে না পারি শারিরীক সুখ দিতে!
না পারি ওর টুকটাক আবদার গুলাও পূরণ করতে। গত ঈদে একটা কাপড় ও দিতে পারি নাই ।"
রায়হানের চোখে পানি।
"
শুভ্রদা!!! কাকে বলবো দুখের কথা!
আপনি আবার বিরক্ত হচ্ছেন না তো?"
আমি বিরক্ত হচ্ছিনা ।
কিন্তু আমার কষ্ট হচ্ছে। রায়হানের জন্য। ভাগ্যের পরিহাস এত নিষ্ঠুর হয়!!!
---"
শুভ্রদা। আমার চাওয়া পাওয়া কি এখন জানেন?
আমি চাই আমার মৃত্যু পর্যন্ত লাবণ্য শুধু আমার পাশে থাকুক।
আমার মৃত্যুর পর যেন বিয়েটা করে।
আমার মৃত্যুর আগে এটা হলে প্রচন্ড কষ্ট পাব। ও সুখী হোক। আমার ভালবাসাকে ওর জন্য বিসর্জন করলাম। "
আমার চোখে পানি এসে গেছে।
আসলেই কি লাবণ্যের দোষ দেয়াটা ঠিক হবে!!!
৩ বৎসর যাবৎ একটা কিডনী রোগীর সাথে সংসার করছে,এই ধরণের রোগীদের লাইফের কি গ্যারান্টি! আজ আছে তো কাল নাই।
--"
শুভ্রদা! সুজন ছেলেটা ওর কলেজ ফ্রেন্ড। মাঝে মধ্যে আমাকে দেখতে আসে;ওর গলার টোন টা আমার মুখস্থ।
কষ্ট পেলাম সেইদিন ই যেদিন লাবণ্যের ব্যাগে কনডম পেলাম!"
রায়হান কাঁদছে.....বাচ্চাদের মত।
---"
বাদ দাও রায়হান! খেয়ে নাও।
খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
--" খাবোনা ভাই। টেনশন লাগতেছে।
লাবণ্য ইদানিং বাইরে গেলে ফোন ধরেনা। আমার ভালবাসার আমানতকে কলঙ্কিত করে.......আমি টের পাই ভাই।
ওর শরীর থেকে ইদানিং অপরিচিত বিশ্রী ঘ্রাণ আসে!"
আমি উঠে দাঁড়ালাম। রায়হানের শ্বাসকষ্ট প্রচন্ড....।
ছেলেটার অবস্থা ভীষন নাজুক।
কয়দিন বাঁচে কে জানে!!!
৩ ঘন্টা হয়ে গেল লাবণ্য একটা ফোন ও দিলোনা।
-----------
১৩.০৯.২০১৪
রাত ৩টা। এই মাত্র রায়হান মারা গেল। ডায়ালাইসিস শেষে বাসায় গেছিল ১০ তারিখ। ১২তারিখে প্রচন্ড শ্বাস কষ্ট উঠে।
আই সি ইউ তে লাইফ সাপোর্টে ছিল।
যা!!!! মুক্তি......শালার জীবন! এতো কষ্ট ক্যান এই ছোট্ট জীবনে?
চিরমুক্তি.............কষ্টের জীবন থেকে।
রায়হানের জন্য মায়া লাগছে।
তবে শান্তি লাগছে.....করুণার জীবন থেকে ছুটি পেয়েছে রায়হান, এই জন্য।
লাবণ্য দাঁড়িয়ে আছে। একদম কোণায়। ওর চোখেও পানি...............হয়তো অনেক ভালবাসতো রায়হান কে।
একটা প্রেম,একটা গল্পের করুণ পরিণতি হলো !!!!!
------------
গত কয়েক দিন যাবৎ একটা প্রশ্নই মাথায় ঘুরে আমার......
এই যে, আমরা হুদাই উ হ! আহ!!! করি...
এত কষ্টের নিস্বাস ফেলি......কিসের কষ্ট আমার/আমাদের? কেন শুকরিয়া করিনা সৃষ্টিকর্তার কাছে!!
কেন নাটক করি কষ্টে থাকার???
কেন??????
মানুষের গল্প শুনলে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয়।
আর যখন হুদাই কষ্টের নাটক করি,জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলি তখন নিজেকে একটা পুরা ফাউল মনে হয় ।
নেংটি পড়া ফাউল.........
=============================================================
No comments:
Post a Comment